SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ | NCTB BOOK

মুজিবনগর সরকারের সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ পরিকল্পনার ফলে একাত্তরের মে মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা শুরু করে। জুন মাস থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি গেরিলা যোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ব্যাপক আক্রমণ চালাতে থাকে। এতে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। মূলত মধ্য নভেম্বর থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে কার্যকর সহায়তা দিতে থাকে। ১৩ই নভেম্বর ট্যাংকসহ দুই ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সৈন্য যশোরে ঘাঁটি স্থাপন করে। পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আরও সুদৃঢ় আক্রমণের জন্য ২১শে নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একটি যৌথবাহিনী গঠন করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়। যুদ্ধকালীন যুক্তিবাহিনীর সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীকে মিত্রবাহিনী বলা হতো। যৌথবাহিনী গঠনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ দারুণ গতি লাভ করে।

৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারতের কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালালে শুরু হয়ে যায় পাক-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধ। যৌথবাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ সীমান্তে এ সময় আক্রমণ শুরু হয়। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে চালানো হয় বিমান হামলা। ৬ই ডিসেম্বর ভারত সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। পরের দিন যশোর বিমান বন্দরের পতনের পর যৌথবাহিনী যশোর শহরে প্রবেশ করে। ৮ থেকে ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী শহর যৌথবাহিনীর দখলে আসে। ১০ই ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণা করে ঢাকাস্থ কূটনৈতিকবৃন্দ ও বিদেশি নাগরিকদের সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। ঐদিন বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে ব্রিটিশ ও অন্যান্য বিদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১১ থেকে ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহ, হিলি, কুষ্টিয়া, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ মুক্ত হয়।

যৌথবাহিনীর শেষ যুদ্ধ 

১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিভিন্ন সামরিক অবস্থানের উপর যৌথবাহিনীর বিমান হামলা চলে। যৌথবাহিনী চারদিক থেকে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা হয়। এর মধ্যে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ শুরু হয়ে যায়। পূর্ব-পাকিস্তানের তাবেদার সরকারের গভর্নর ডা. মালিক ভয়ে পদত্যাগ করে তার মন্ত্রীদের নিয়ে নিরপেক্ষ এলাকায় অর্থাৎ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেয়। ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যত্র অনেক বড় শহর ও সেনানিবাসে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে । ঐ দিনই পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ঢাকা শহরের চারদিক তখন যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রাখে। যে কোনো সময় ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ঘটতে পারে অবস্থা সে রকম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আত্মসমর্পণের সুবিধার্থে মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল স্যাম মানেকশ'র আহ্বানে উভয় পক্ষ ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল তিনটা পর্যন্ত যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়।

কাজ-১: মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও যৌথবাহিনী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
কাজ-২: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রহ করে যৌথভাবে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করো।

Content added By